Filled Under:

ভাইরাস ঠেকাতে - প্রথম আলো

Share
ভাইরাস ঠেকাতে - প্রথম আলোদৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা , ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস ব্যবস্থাপনার মতো সব কাজেরই একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ কম্পিউটার। এর বাইরেও ঘরোয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা অনেক বেশি। কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার। আছেইন্টারনেটের ব্যবহার।কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস বা ওয়ার্মের আক্রমণও বেড়ে গেছে।এই ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারের ব্যবহার প্রতিটি কম্পিউটারেই অনিবার্য। এমনিতে আমাদের দেশে সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করার প্রবণতা বেশ কমই দেখা যায়।কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবহারকারীই অ্যান্টি ভাইরাস কিনছেন নিরাপদ থাকার জন্য।অ্যান্টি ভাইরাস কম্পিউটারের একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার, যা কম্পিউটার ভাইরাস, কম্পিউটার ওয়ার্ম, ট্রোজান হর্স, স্পাইওয়্যার, অ্যাডওয়্যার জাতীয় প্রোগ্রামগুলোর ক্ষতিকর আক্রমণকে ঠেকিয়ে দেয়।এ রকম প্রতিটি ক্ষতিকর সফটওয়্যারের জন্য আলাদা নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। আবার এমন কিছু সফটওয়্যার রয়েছে, যেগুলো একইসঙ্গে নানা ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার থেকে কম্পিউটারকে নিরাপত্তা দেয়। নরটন, ক্যাস্পারস্কি, ইসেট, এভিরা বিট ডিফেন্ডারের মতো বিশ্বের প্রায় সব অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারই এখন বাংলাদেশে পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট পরিবেশকের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় বলে বর্তমানে সফটওয়্যারের বৈধ সংস্করণটি কিনে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি সীমিত সুবিধার কিছু অ্যান্টি ভাইরাস রয়েছে যেগুলো ইন্টারনেট থেকে বিনা মূল্যে নামিয়ে ব্যবহার করা যায়। আবার প্রতিটি এন্টারপ্রাইজ অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারই স্বল্প সময়ের জন্য বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুযোগ পান গ্রাহকেরা। তবে বিনা মূল্যের সংস্করণের সঙ্গে এন্টারপ্রাইজ সংস্করণগুলোর মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। আর প্রতিটি এন্টারপ্রাইজ অ্যান্টি-ভাইরাসেই বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।অ্যান্টি ভাইরাস নিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়, তারা সফটওয়্যারটির বৈধ কপি ব্যবহার করছে, তারপরও কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।এ ধরনের সমস্যা এড়াতে বেশ কিছু উপায় জানালেন নরটন অ্যান্টি ভাইরাসের পরিবেশক কম্পিউটার সোর্সলিমিটেডের পরিচালক আসিফ মাহমুদ। তিনি বললেন, অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারগুলো ক্ষতিকর প্রোগ্রাম চিহ্নিত করে ভাইরাস ডেফিনেশনের ভিত্তিতে।ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনা মূল্যে এই ভাইরাস ডেফিনেশন হালনাগাদ (আপডেট) করা যায়। নরটনসহ বর্তমানে প্রায় সব অ্যান্টি ভাইরাসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত এটি হালনাগাদ করে। কিন্তু কোনো ব্যবহারকারী যদি ইন্টারনেটে যুক্ত না থাকে, অথবা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখে, তবে ডেফিনেশন তালিকা হালনাগাদ হবে না। ফলে খুব সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি করা কোনো ভাইরাস এটি চিহ্নিত নাও করতে পারে। আবার কোনো কোনো অ্যান্টি ভাইরাস সিস্টেম ফাইল হিসেবে চিহ্নিত অ্যান্টি ভাইরাসগুলো মুছে ফেলার আগে ব্যবহারকারীকে জিজ্ঞাসা করে। তখন যদি এগুলো মুছে ফেলা না হয়, তবে পরে তা কম্পিউটারের ক্ষতি করতে পারে। কোনো কোনো অ্যান্টি ভাইরাস এন্টারপ্রাইজ সংস্করণের মতো নিয়মিত ডেফিনেশন তালিকা হালনাগাদ করে না, এটিও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।কিছু অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ইন্টারনেট থেকে বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। এন্টারপ্রাইজ এবং বিনা মূল্যের অ্যান্টি ভাইরাস নিয়ে কথা বললেন ইসেটের বাজারজাতকারীপ্রতিষ্ঠান ডেমন সিস্টেমসের পরিচালক সাহেদ ইকবাল। তিনি জানান, বিনা মূল্যের সংস্করণে সীমিত আকারে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। অপরদিকে এন্টারপ্রাইজ সংস্করণ ভাইরাস, স্পাইওয়্যার, ট্রোজানের মতো সব ক্ষতিকর প্রোগ্রামকে ঠেকাতে পারে।ওয়েব ব্রাউজার, ই-মেইল ক্লায়েন্ট ও মেসেঞ্জারের মতো সফটওয়্যার সব সময়ই ইন্টানেটে যুক্ত থাকছে। তাই এসব সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেন কম্পিউটারে কোনো ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ঢুকতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় এন্টারপ্রাইজ সংস্করণে।বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং স্বাভাবিকভাবেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াচ্ছে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে। পরিবেশকদের মতে, অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারের ইন্টারনেট সিকিউরিটি এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ে নিরাপত্তা প্যাকেজগুলো সব ক্ষেত্রেই পাওয়া যায় এন্টারপ্রাইজ সংস্করণে।বাংলাদেশে ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টি-ভাইরাসের পরিবেশক অফিস এক্সট্রাক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রবীর সরকার বলেন, মান ধরে রেখেএবং বিক্রয়োত্তর সেবার মাধ্যমে যে দেশে সফলভাবে আসলসফটওয়্যারের ব্যবসা করা যায়, ক্যাস্পারস্কি তা প্রমাণ করেছে। এখন ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই পর্যায়েই গ্রাহকেরা আসলঅ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তিনি জানান, অফিস এক্সট্রাক্ট বাংলাদেশ ও ভুটানে ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টি ভাইরাস পরিবেশন করে থাকে।পাইরেটেড ও আসলসফটওয়্যারের মানে অনেক পার্থক্য থাকে।এ ছাড়া বিক্রয়োত্তর সেবার কোনো অংশই ভোগ করতে পারে না একজন পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারকারী। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা প্যাঁচসহ অন্যান্য হালনাগাদ থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। তুলনামূলক নতুন যাত্রা শুরু করেছে অ্যাভিরা ও বিটডিফেন্ডার অ্যান্টি ভাইরাস। এগুলোও এখন দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে।বাজারে পাওয়া যায় এমন প্রতিটি অ্যান্টি-ভাইরাসেরই ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী অথবা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ প্যাকেজ রয়েছে।নরটন, ইসেট, ক্যাস্পরস্কিসহ বিভিন্ন অ্যান্টি ভাইরাস কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তা সমাধান দেয়। আবার একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য ‘গুচ্ছ’ হিসেবেও কেনার সুযোগ রয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে অ্যান্টি ভাইরাসগুলো। পরিবেশক, পুনর্বিক্রেতাসহ কম্পিউটারের প্রায় সব বিক্রেতার কাছেই অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার পাওয়া যায়।বিনা মূল্যের অ্যান্টি ভাইরাসমাইক্রোসফট উইন্ডোজে অনেক আগে থেকেই মাইক্রোসফট সিকিউরিটি অ্যাসেনশিয়াল নামে বিনা মূল্যে একটি নিরাপত্তা হালানাগাদ সংগ্রহ করা যেত। এখন মাইক্রোসফট সিকিউরিটি অ্যাসেনশিয়াল নামের অ্যান্টি ভাইরাস বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার স্ক্যান করা নিয়মিত ডেফিনেশন ডেটাবেজ হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। বিনা মূল্যে সংগ্রহের ঠিকানা—www.microsoft.com/en-gb/security_essentialsবিনা মূল্যের অ্যান্টি ভাইরাসগুলোর মধ্যে অ্যাভাস্ট (www.avast.com/free-antivirus-download) বেশ জনপ্রিয়। যদিও একই সঙ্গে এর এন্টারপ্রাইজ সংস্করণ রয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বিনা মূল্যের সংস্করণে কিছুটা কম সুবিধা পাওয়া যায়। বিশেষত, ইন্টারনেট সিকিউরিটি পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করা যাবে কেবল এন্টারপ্রাইজ সংস্করণে।বাজারে এখন যা আছেনরটন: নরটনের সর্বশেষ সংস্করণ নরটন অ্যান্টি ভাইরাস ২০১২ ও নরটন অ্যান্টি ভাইরাস ইন্টারনেট সিকিউরিটি ২০১২। ব্যক্তিগতভাবে এক, তিন বা পাঁচজনের জন্য কেনা যাবে এই সফটওয়্যার। এ ছাড়া করপোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা প্যাকেজ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস কম্পিউটারের বুট সেক্টরের ক্ষতি করে থাকে। তাই নরটন অ্যান্টি-ভাইরাসের ইনস্টলার সিডিগুলো কম্পিউটার চালু করার (বুটেবল) উপযোগী করে তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ বুট সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই সিডি দিয়ে কম্পিউটার চালু করা হলে সেটি কম্পিউটার চালুর আগে বুট সেক্টরের ভাইরাসগুলো অপসারণ করতে পারবে। ইন্টারনেটে নিরাপত্তা দিতে আছে নরটন ইন্টারনেট সিকিউরিটি। সাধারণ ভাইরাস অপসারণের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই সংস্করণ। ওয়েবসাইট খোলা, ই-মেইল আদান-প্রদান, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এমনকি মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসগুলো ঠেকাতে পারে এটি।পাশাপাশি স্মার্টফোনগুলোর জন্য নরটনের রয়েছে আলাদা সংস্করণ।ক্যাস্পারস্কি: গত মাসে ক্যাস্পারস্কি বাজারে এনেছে সর্বশেষ সংস্করণ ক্যাস্পারস্কি ২০১২। ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল যন্ত্রগুলোর জন্য পাওয়া যাচ্ছে এই অ্যান্টি ভাইরাস। ইন্টারনেটে যুক্ত থাকলে ক্যাস্পারস্কি অ্যান্টি ভাইরাস প্রতি এক ঘণ্টা পর পর ভাইরাস ডেফিনেশন ডেটাবেজ হালনাগাদ করে থাকে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের বিশেষ নিরাপত্তা-সুবিধা পাওয়া যায় ক্যাস্পারস্কিতে।ইসেট: ইসেট পরিচিত ইসেট নোড৩২ এবং ইসেট স্মার্ট সিকিউরিটি অ্যান্টি ভাইরাসের জন্য। ভাইরাস চিহ্নিত করার জন্য এর প্রোগ্রাম এমনভাবে লেখা হয়েছে, যে কারণেক্ষতিকর প্রোগ্রামগুলো এর নিরাপত্তাব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পারে না। ব্যক্তিগত ও করপোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য ইসেট আলাদা প্যাকেজে বাজারজাত করা হচ্ছে।বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ধরন এবং প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে ই-সেট করপোরেট প্যাকেজ। প্রতিটি প্যাকেজেই ভাইরাস ডেফিনেশন বিনা মূল্যে হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।প্রতিটি অ্যান্টি-ভাইরাসের সঙ্গেই বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া হয়। কেনার আগে চাইলে বিনা মূল্যে পরীক্ষামূলক সংস্করণ ব্যবহার করাও যায়। প্রায়প্রতিটি অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারে এক বছর মেয়াদের লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকে।

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment